কিডনি রোগে - Chronic Kidney Disease (CKD) in Bengali

Dr. Rajalakshmi VK (AIIMS)MBBS

December 27, 2018

September 08, 2020

কিডনি রোগে
কিডনি রোগে

সারাংশ

যখন ধীরে ধীরে কিডনির কার্যপ্রাণালী হ্রাস পায় তখন তা দীর্ঘস্থায়ী কিডনির (বৃক্ক) অসুখে (সিকেডি) (ক্রনিক রেনাল ডিজিজ) দাঁড়িয়ে যায়। তার অর্থ, রোগ যখন বাড়তে থাকে তখন কিডনির যা কাজ, অর্থাৎ রক্ত পরিশ্রুতকরণ, তা আর করতে পারে না। সিকেডি-র দু’টি প্রধান কারণ হল, ডায়বিটিস (মধুমেহ) এবং উচ্চ রক্তচাপ। প্রথমাবস্থায় সাধারণত কিডনির অসুস্থতায় কোনও উল্লেখযোগ্য উপসর্গ দেখা যায় না। কাজেই সাধারণত, নিয়মিত রক্ত এবং প্রস্রাব পরীক্ষার সময় তা ধরা পড়ে। তবে, যদি চিকিৎসা সত্ত্বেও কিডনি খারাপ হতে থাকে বা প্রাথমিক পর্যায়ে যদি সিকেডি ধরা না পড়ে তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তির গোড়ালি ফুলতে থাকে, প্রস্রাবে রক্ত দেখা যায়, পেশিতে টান ধরে, বারবার মুত্রত্যাগ করতে হয় এবং সামান্য পরিশ্রমেই হাঁফ ধরে যায়। সিকেডি-র চিকিৎসা রোগের মূল কারণের ওপর নির্ভর করে। সিকেডি নিয়ন্ত্রণে ওষুধের সঙ্গে সঙ্গে জীবনশৈলীর পরিবর্তনের একটি বড় ভূমিকা আছে। যদি কিডনির কার্যপ্রণালী উত্তরোত্তর খারাপ হয় তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তি অসুখের অন্তিম পর্যায়ে বা এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ (ইএসআরডি/রেনাল ফেলিওর/ কিডনি ফেলিওর) পৌঁছে যান, যখন ডায়লিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে সিকেডি আক্রান্ত 50 জনের মধ্যে 1 জনের কিডনি অকেজো বা নষ্ট হয়ে যায়। কিডনির জটিলতা বা তা অকেজো বা নষ্ট হয়ে যাওয়া আটকাতে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা খুব জরুরি।

কিডনি রোগে (কিডনি ফেল) এর উপসর্গ - Symptoms of Chronic Kidney Disease in Bengali

CKD -এর উপসর্গের মধ্যে আছে:

প্রাথমিক উসর্গ

সাধারণভাবে যখন বৃক্কের (কিডনি) ক্ষমতা বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখনও মানবশরীরের কাজকর্ম ঠিকভাবেই চলতে থাকে। কাজেই, প্রথমদিকে CKD-র উপসর্গ তেমনভাবে পরিলক্ষিত হয় না। CKD-র প্রাথমিক উপসর্গ সাধারণভাবে অস্পষ্ট। এই সব উপসর্গের মধ্যে আছে:

যদি নিয়মিত রক্ত বা মুত্র পরীক্ষা করে কিছু সমস্যা চিহ্নিত হয় তাহলে এরকম প্রাথমিক পর্যায়ে CKD নির্ণয় সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে CKD  নির্ণয় এবং চিকিৎসা সম্ভব হলে ব্যাধির বৃদ্ধি রোধ সম্ভব হতে পারে।

উত্তরকালের উপসর্গ

যদি কিডনির রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা সম্ভব না হয় বা চিকিৎসা সত্ত্বেও অসুস্থতা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে তাহলে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে:

  • কিডনির সমস্যার কারণে রক্তে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মাত্রায় হেরফেরের দরুন হাড়ে ব্যাথা।
  • শরীরে জল জমে যাওয়ার কারণে হাত এবং গোড়ালি ফুলে যাওয়া এবং অসাড় হয়ে যাওয়া।
  • শরীরে বর্জ্য জমে যাওয়ার জন্য নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ যার সঙ্গে অ্যামোনিয়া বা আঁশটে গন্ধের সাযুজ্য আছে।
  • ক্ষুধামান্দ্য এবং ওজন হ্রাস।
  • বমি।
  • বারবার হিক্কা তোলা।
  •  প্রস্রাবের মাত্রা বৃদ্ধি, বিশেষত রাত্রে।
  • শাসকষ্ট।
  • ক্লান্তি।
  • মল-মুত্রের সঙ্গে রক্তক্ষরণ।
  • চিন্তা-ভাবনা বা  মনোযোগের অভাব।
  • পেশিতে টান ধরা/ খিল বা স্প্যাজম। 
  • অল্প আঘাতে ক্ষত তৈরি হওয়া।
  • বারবার জল খাওয়ার প্রবণতা।
  • ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া (অ্যামিনোরিয়া)।
  • অনিদ্রা (ইনসমনিয়া)।
  • ত্বকের রঙের পরিবর্তন হয়ে খুব হাল্কা বা গাঢ় হয়ে যাওয়া।
  • যৌন ক্রিয়াকলাপে অক্ষমতা।

CKD-র অন্তিম পর্যায়কে বলা হয় কিডনি/ রেনাল ফেলিওর বা রেনাল অসুস্থতার শেষ পর্যায় (ESRD), যখন ডায়লিসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।  

কিডনি রোগে (কিডনি ফেল) এর চিকিৎসা - Treatment of Chronic Kidney Disease in Bengali

সিকেডি নিরাময়যোগ্য নয় এবং এর চিকিৎসা বলতে নজর রাখা যাতে উপসর্গ কমানো যায় এবং উত্তরোত্তর পরিস্থিতির অবনতি না হয়। রোগের তীব্রতার ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে।  

চিকিৎসার প্রধান উপাদান হল:

  • জীবনশৈলীর পরিবর্তন 
    সুস্বাস্থ্যের জন্য এই পরিবর্তনগুলি করা প্রয়োজন। চিকিৎসক আপনাকে নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলি অনুসরণ করার পরামর্শ দেবেন:
    • ধূমপান ত্যাগ করুন।
    • সুষম এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
    • দৈনিক লবণ গ্রহণ 6g গ্রামের কম করুন।.
    • দৈনিক অন্তত 30 মিনিট ব্যায়াম করুন এবং সপ্তাহে তা পাঁচদিন করতে হবে। 
    • সপ্তাহে মদ্যপানের মাত্রা 14 ইউনিটের কম রাখুন।
    • ওজন ঝরান এবং আপনার উচ্চতা এবং বয়স অনুযায়ী ওজন ঠিক রাখুন।
    • নিজের ইচ্ছামত ওষুধ খাবেন না।
  • ওষুধ
    অন্যান্য সহযোগী সমস্যা, যেমন ডায়বিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বা উচ্চ কোলেস্টরলের কথা মাথায় রেখে ওষুধের পরামর্শ দেওয়া হয়।
    • যাঁদের ডায়বিটিস আছে তাঁদের সুষম এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত রক্ত রীক্ষা করাতে হবে। 20
    • উচ্চ রক্তচাপের জন্য চিকিৎসক অ্যান্টিজিয়োটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম (এসিই) ইনহিবিটরস নিতে পরামর্শ দিতে পারেন যাতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রোধের জন্য চিকিৎসক অ্যান্টিজিয়োটেনসিন-II রিসেপটর ব্লকার (এআরবি) দিতে পারেন। চিকিসার মূল লক্ষ হচ্ছে রক্তচাপ 140/90 mm/Hg নিচে রাখা।
    • কোলেস্টরলের মাত্রা কমানোর জন্য স্ট্যাটিন গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
    • গোড়ালি বা হাত ফুলে গেলে মূত্রবর্ধক ওষুধ দেওয়া হয় এবং নুন এবং জল খাওয়া নিয়ন্ত্রিত করা হয়।
    • যে দীর্ঘস্থায়ী কিডনির অসুখে রক্তাল্পতা দেখা দেয়, সেখানে লৌহ পদার্থ উপাদানে সমৃদ্ধ ওষুধ বা খাদ্য গ্রহণ বা হরমোন ‘ইরিথ্রোপোয়েটিন’ ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়, যাতে লোহিত রক্ত কণিকা বা আরবিসি উৎপাদন বাড়ে।
    • বেশিদিন যাঁরা সিকেডি-তে ভুগছেন তাঁদের জন্য ডায়লিসিস প্রয়োজন হতে পারে।
    • বেশিদিন সিকেডি-তে ভুগবার জন্য যাঁদের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা অকেজো হয়ে পড়েছে তাঁদের কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে।
  •  সহায়ক (উপশমকারী/ চিরায়ত) চিকিৎসা
    যদি আপনি ডায়লিসিস করতে বা চান বা কিডনি প্রতিস্থাপনে অরাজি হন, বা সেগুলি আপনার পক্ষে উপযুক্ত না হয় তাহলে আপনার স্বাস্থ্য পরিষেবাকারীরা আপনাকে সহায়ক চিকিৎসার সন্ধান দেবেন। সহায়ক চিকিৎসার মূল লক্ষ হচ্ছে আপনার চিকিৎসা করা, স্বস্তি দেওয়া এবং রেনাল ফেলিওরের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা, এবং চিকিৎসার অঙ্গীভূত থাকে আক্রান্ত রোগী এবং তাঁর পরিবারের মানসিক, চিকিৎসা সংক্রান্ত এবং ব্যবহারিক বিষয়গুলির যত্ন নেওয়া।

(জীবনশৈলী) লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট

আপনি নিজের কিডনি সম্পূর্ণ কার্যকর রাখতে পারেন যদি জীবনশৈলীর কিছু সাধারণ পরিবর্তন করেন। সেগুলির মধ্যে আছে:

  • কম সোডিয়াম যুক্ত খাদ্য গ্রহণ এবং প্যাকেটবন্দি (ক্যান বা টিন) খাদ্য এড়িয়ে যাওয়া, কারণ সেগুলি অতিরিক্ত সোডিয়াম সমৃদ্ধ।
  • দৈনিক অন্তত 30 মিনিট ব্যায়াম করা। শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার উত্তম উপায় হচ্ছে সাঁতার কাটা, এবং জোরে হাঁটা। তবে, যদি আপনি পূর্বে শারীরিকভাবে খুব একটা সক্ষম না থেকে থাকেন তাহলে স্বাস্থ্য পরিষেবাকারীদের সঙ্গে পরামর্শ করে জেনে নিন, আপনার পক্ষে কী ধরনের ব্যায়াম চলতে পারে।
  • তাজা ফল, সবজি, শস্যদানা, বিন, ত্বকবিহীন টার্কি বা মুরগি, মেদবিহীন মাংস, মাছ, এবং কম স্নেহ-পদার্থ বিশিষ্ট দুধ, চিজ খাওয়া খাবেন। চিনি দেওয়া পানীয় খাবেন না। কম ক্যালরি যুক্ত খাবার বাছুন, চর্বি, ট্রান্স-ফ্যাট, নুন, এবং চিনি দেওয়া খাদ্য এড়িয়ে চলুন।
  • নজর রাখুন, ওজন যেন স্বাস্থ্যকর হয়। স্থূলত্বের কারণে কিডনির ওপরে চাপ বাড়ে। একজন প্রশিক্ষিত ফিটনেস বিশেষজ্ঞ এবং একজন খাদ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করুন, যাতে ওজন ঠিক থাকে।
  • প্রচুর ঘুমোন এবং প্রতিরাত্রে  7 থেকে 8 ঘণ্টা ঘুমোবার চেষ্টা করুন। আপনার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য  প্রচুর ঘুমের প্রয়োজন, এবং তা রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • ধূমপান ত্যাগ করুন কারণ তাতে কিডনির ক্ষতি বেশি হয়। ধূমপান বন্ধ করলে রক্তচাপের লক্ষ্যমাত্রা ভাল থাকে।
  • আপনার মানসিক চাপ এবং অবসাদ যেন কম থাকে কেননা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আবেগপূর্ণ সঙ্গীত শোনা, প্রশান্ত বা শান্তিপূর্ণ ছবি বা ঘটনার ওপর নজর রাখা, বা ধ্যান করলে চাপের সঙ্গে লড়াই করতে সাহস জোগায়।
  • ওষুধের বিকে খেয়াল রাখুন, চিকিৎসকের নির্দেশমত ঠিকমত সময়ে তা গ্রহণ করুন।


তথ্যসূত্র

  1. National Kidney Foundation [Internet] New York; About Chronic Kidney Disease
  2. National Health Service [Internet]. UK; Chronic kidney disease.
  3. MedlinePlus Medical Encyclopedia: US National Library of Medicine; Chronic kidney disease
  4. Lameire N, Van Biesen W. The initiation of renal-replacement therapy--just-in-time delivery. N Engl J Med. 2010 Aug 12. 363(7):678-80. PMID: 20581421
  5. Jha. V., Garcia-Garcia. G., Iseki. K., et. al. Chronic kidney disease: Global dimension and perspectives. Lancet. Jul 20, 2013;382(9888):260-272. https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/23727169. PMID: 23727169
  6. National Institute of Diabetes and Digestive and Kidney Diseases [internet]: US Department of Health and Human Services; Chronic Kidney Disease (CKD).
  7. MedlinePlus Medical Encyclopedia: US National Library of Medicine; Glomerular filtration rate
  8. Song E-Y, McClellan WM, McClellan A, et al. Effect of Community Characteristics on Familial Clustering of End-Stage Renal Disease. American Journal of Nephrology. 2009;30(6):499-504. doi:10.1159/000243716. PMID: 19797894
  9. National Health Service [Internet]. UK; Diabetes.
  10. National Institute of Diabetes and Digestive and Kidney Diseases [internet]: US Department of Health and Human Services; Managing Diabetes.

কিডনি রোগে জন্য ঔষধ

Medicines listed below are available for কিডনি রোগে. Please note that you should not take any medicines without doctor consultation. Taking any medicine without doctor's consultation can cause serious problems.